আহমেমদ কবীর সিকদার,কুতুবদিয়া( কক্সবাজার): আজ ভয়াল ২৯ এপ্রিল। সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে আজকে আমার এই প্রতিবেদন। এদিনে ‘ম্যারি এন‘ নামক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় দেশের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় পূরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। রাতের নিস্তব্ধতা এবং অন্ধকার ভেদ করে মুহূর্তের মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল কুতুবদিয়া,কক্সবাজার, মহেশখালী, চকরিয়া, বাশখালী, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, সীতাকুণ্ড পতেঙ্গাসহ উপকূলীয় এলাকা। বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছিল। দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই আঘাত।পরদিন বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল সেই ধ্বংসলীলা ১৯৯১ ‘ম্যারি এন‘ দেখে। কেঁপে উঠেছিল বিশ্ব বিবেক। বাংলাদেশে আঘাত হানা ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় গুলোর মধ্যে অন্যতম।১৯৯১ ‘ম্যারি এন’ ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় দক্ষিণপূর্ব চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় দ্বীপাঞ্চল কক্সবাজার জেলার দ্বীপ ‘’কুতুবদিয়া’’। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় এ তাদের ক্ষয়-ক্ষতির দৃশ্য,আর্তমানবতার চিৎকার শুনে বাংলাদেশ পেরিয়ে এশিয়া তথা সারা বিশ্বের মিডিয়ায় স্থান পেয়েছিল এই ঘূর্ণিঝড় “৯১ ।
এই ঘূর্ণিঝড় এ কুতুবদিয়াবাসীর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান অপরিসীম যেখানে ‘’৯১ ঘূর্ণিঝড় এ পুরো দ্বীপের অবকাঠামো-ই নড়েছরে গেছে,কারো পুরো পরিবার পানিতে ভেসে গেছে,কারো বাড়িঘর এর চিহ্নসহ নাই তলিয়ে গেছে পানিতে,গৃহপালিত গরু-ছাগল,হাঁসমুরগি এসেব কথা নাই বললাম। যেখানে এই স্মরনকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় কুতুবদিয়ার মানচিত্রকে আকারে ছোট করে দিয়ে গেল সেখানে একবার ভেবে দেখুন কি পরিমান ক্ষতি হতে পারে এই কুতুবদিয়া বাসীর।একটা ঘূর্ণিঝড় এর দুঃসহ স্মৃতি এখনো প্রতি বছর কাঁদায় এই কুতুবদিয়াবাসীকে। নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরনকালের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় গুলির মধ্যে একটি।২০০৮ সিডর এ বাতাসের গতিবেগ ছিল ২৪০ কিমি প্রতি ঘন্টায়,আর ৯১ এ ২৫০ কিমি/ঘন্টা বেগে কুতুবদিয়ায় আঘাত হানে, যার ফলে সমুদ্রের পানি ৬মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস(বঙ্গোপসাগরের বড় বড় ডেউ) উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত করে,জলোচ্ছ্বাস এর ফলে বঙ্গোপসাগরের বড় বড় ডেউ এ সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যায় এই কুতুবদিয়ার সিংহভাগ এলাকা।পুরো দ্বীপ ই তখনকার লোনা পানিতে ডুবে ছিল। যেখানে কূল কিনারাবিহীন পুরো দ্বীপ ই পানিতে ডুবেছিল সেখানকার বাসিন্দারা কেমনে কিছু মানুষ বেছে ছিল তা আল্লাহ্ই ভাল জানে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ২২শে এপ্রিল, ১৯৯১ বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্মচাপের সৃষ্টি হয়। বাতাসে গতিবেগের ও নিম্মচাপের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি ২৪শে এপ্রিল ঘুর্নিঝড়ে রূপ নেয়। ঘুর্নিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এর শক্তি আরও বাড়তে থাকে।
২৮ ও ২৯ এপ্রিল সোমবার এটির তীব্রতা প্রচন্ড বৃদ্ধি পায় এবং গতিবেগ ১৬০ মাইল/ঘন্টায় পৌছায় যা একটি ক্যাটাগরী-৫ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। ২৯শে এপ্রিল সোমবার রাতে এটি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তি অঞ্চলে ১৫৫ মাইল/ঘন্টা বেগে আঘাত করে যা ক্যাটাগরী-৪ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। স্থলভাগে আক্রমনের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং ৩০শে এপ্রিল এটি বিলুপ্ত হয়।১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় এ সারা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১,৩৮,০০০ মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়।সবচেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি এবং মানুষ মারা যায় দ্বীপ কুতুবদিয়ায় প্রায় এক লক্ষ। ১৯৯১ঘূর্ণিঝড় যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস, কুতুবদিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল স্মরণকালের ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ১৯৯১। এদিনে গোটা কুতুবদিয়া উপকূলের মানুষ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন। হয়েছিল হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি।আগামী ২৯ এপ্রিল শুক্রবার ভয়াল ১৯৯১ঘূর্ণিঝড়ের ২৫ বছর পূর্তির দিন। দিনটি কুতুবদিয়া উপকূলের লাখো মানুষের শোক-মাতমের দিন, যা আজো ভুলতে পারেননি উপকূলবাসীতারা।২৫বছর আগের এই দিনে ১৯৯১ঘূর্ণিঝড় তাণ্ডবে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছিলো এই দ্বীপ কুতুবদিয়া সহ চট্রগ্রামের উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চল । মুহূর্তের ধ্বংসলীলায় বিধ্বস্ত হয় সারা বাংলাদেশের প্রায় ১,৩৮,০০০ মানুষ নিহত এবং প্রায় ১ কোটি মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায় ।
লাখ লাখ মানুষের বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, বাড়ির উঠান, ঘরের চালা আর পথে-প্রান্তরে পড়ে থাকে অসংখ্য মানুষের মরদেহ।স্বজনহারা মানুষের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। মৃত, আহত আর ক্ষুধার মতো ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি ঘূর্ণি হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে বিধ্বস্ত হয় সড়ক, নৌ, বিদ্যুৎ এবং টেলিযোগাযোগসহ আধুনিক সভ্যতার সার্বিক অবকাঠামো।সেদিন রাতে ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে বঙ্গোপসাগর থেকে ঘূর্ণিঝড় ১৯৯১ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। প্রথমে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে গিয়ে ধ্বংসের থাবা বসায় কুতুবদিয়ায় ।ঘূর্ণিঝড় ১৯৯১ আঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপ কুতুবদিয়ায় ঘরের ভেতর-বাইরে সবখানে লাশের উপর লাশ পড়ে থাকে। হাজার হাজার বসতবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত ,মাছ চাষ, বেড়ীবাঁধ আর গাছপালা মাটির সঙ্গে মিশে উজাড় হয়ে যায়।
অনেক জায়গায় ঘর-বাড়ি পুরোপুরি নিঃচিহ্ন তথা বিলীন হয়ে পড়ে।
এমনকি ৯১ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকায় কাফনের কাপড়ের অভাবে অনেকে নিহতের মরদেহ পলিথিনে মুড়িয়ে দাফন করেন। এছাড়া কবরের জায়গার অভাবে গণকবরও দেওয়া হয়। একটি কবরে এক সঙ্গে দাফন করা হয় অনেকজনকে। অনেক মরদেহের কোনো পরিচয়ও পাওয়া যায়নি। তাদেরকে অজ্ঞাত পরিচয়ে দাফন করেন স্থানীয়রা। এ সময় চারদিকে মানুষের মরদেহ আর মরা জীবজন্তুর পচা গন্ধে পরিবেশ দুর্গন্ধময় হয়ে ওঠে।প্রায় একমাস পরও ধান ক্ষেত, নদীর চর, বেড়িবাঁধ, গাছের গোড়া আর জঙ্গলসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয় অনেক ভাগ্যাহতের কঙ্কাল। কেউ কেউ ৯১ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার অনেক দিন পর স্বজনদের কাছে ফিরেও আসেন। তবে না ফেরার সংখ্যাই ছিল বেশি।মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের বেশির ভাগেরই সলিল সমাধি হয় সাগরে। যাদের কোনো অস্তিত্
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।